প্রকাশিত: ২৯/১২/২০১৪ ৪:২০ অপরাহ্ণ

ইট বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে…
Pic ukhiya-29-12-2014
গফুর মিয়া চৌধুরী, সিএসবি২৪:
কয়লার অভাবে এই মৌসুমে দেশের সব ইট ভাটায় উৎপাদন শুরু হয়নি। সেই সাথে কক্সবাজারের উখিয়ার সবকটি ইট ভাটা গুলোতেও এখনো পর্যন্ত ইট উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। তবে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এখন কয়লা আমদানী শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ইটের উৎপাদনও। কিন্তু এর মধ্যে বেড়ে গেছে ইটের দাম অবিশ্বাস্য ভাবে।

গত মৌসুমে উৎপাদিত প্রতি হাজার ইট যেখানে ৬ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৫শত থেকে ৮ হাজার ৫শত টাকায়। অর্থাৎ প্রতি হাজার ইটের দাম বেড়েছে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা।

ইট ভাটার মালিকরা বলছেন, কয়লা আমদানী শুরু হলেও আমদানী মূল্য বেড়ে গেছে আগের চেয়ে ৩ গুণ। আর বেশি দামে কয়লা আমদানী তাদের ইটের দাম বাড়াতে বাধ্য করেছে। উখিয়ার রুমখাঁ পালং এস.বি.এম ব্রিক্স প্রোডাক্টস ইট ভাটার মালিক শাহ আলম চৌধুরী প্রকাশ রাজা শাহ আলম বলেছেন, কক্সবাজার জেলায় মোট ৬০টি ইট ভাটা রয়েছে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা আসছে তার দাম বেড়েছে ৩ গুণ। কিন্তু সেই অনুযায়ী ইটের দাম বেশি বাড়ানো হয়নি। দেশে নভেম্বর থেকে এপ্রিল, কোন কোন ক্ষেত্রে, মে পর্যন্ত হচ্ছে ইট প্রস্তুতের মৌসুম। প্রতি বছর নভেম্বরে শুরু হলেও এবার ইট ভাটায় কয়লার অভাবে উৎপাদনে যেতে পারেননি। কক্সবাজারের ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি বলছে, সারা দেশে ৬ হাজার ২শত ইট ভাটা আছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ইট ভাটা কয়লার অভাবে এখনো ইট উৎপাদন করতে পারেননি। কারন ইট ভাটায় এক বার কয়লা পুড়ানো শুরু হলে তা আর বন্ধ করা যায় না। যেসব ইট ভাটায় আগের কয়লা মওজুদ ছিল, সেই সব ইট ভাটাতে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে অবশ্যই দেশে ইট ভাটা আছে ৬ হাজার ৭শত ৪৬টি। ইট প্রস্ততকারক সমিতির হিসাবে দেশের ইট ভাটা গুলো চালাতে বছরে ৩৭ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন। এই কয়লার বড় অংশীয় আসে ভারত থেকে। বিশেষ করে মেঘালয় ও আসাম থেকে। তবে ভারতীয় পরিবেশবাদীদের মামলার কারনে গত ১৬ মে থেকে ভারতীয় কয়লা আশা বন্ধ হয়ে যায়।

ইট ভাটার মালিকরা বলছেন, যেই সময়টা ভারত কয়লা আমদানী বন্ধ রাখে তখন দেশে ইট উৎপাদনের মৌসুম ছিল না। সেই কারনে রপ্তানি নিষেজ্ঞতার প্রভাব ইট ভাটা গুলোতে তেমন পড়েনি। আবার এবারের মৌসুম শুরু কিছু দিন পরেই ভারত কয়লা আমদানী শুরু করেছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এখন ছড়া দামে কয়লা আমদানী করতে হচ্ছে। আবার কয়লা আসছে চাহিদার চেয়ে অনেক কম। উখিয়ার জি.এম.এস ব্রিকস্ ইট ভাটার মালিক নুরুল আলম জানান, কয়লা আমদানীর সঙ্গে জড়িত ভারত ও বাংলাদেশের একটি সিন্ডিকেট কয়লার কৃত্রিম সংকট ও দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত। চাহিদা মত কয়লা না পেয়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ইট ভাটা বন্ধ রয়েছে। যেসব মালিক বেশি দামের কয়লা কিনে ইট ভাটা চালু রেখেছেন তারা বেশি দামের ইট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। উখিয়ার ভালুকিয়াপালংস্থ এ.টি.আর ব্রিকস্ প্রোডাক্টস লিঃ ইট ভাটার মালিক খাইরুল আলম চৌধুরী বলেন, তাঁর ইট ভাটাটি জিকঝাঁক পদ্ধতি ও সম্পূণ পরিবেশ বান্ধব। শতভাগ কয়লা ব্যবহার করে ইট উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে কিছু কিছু ইট ভাটার মালিক বনাঞ্চলের কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরী করায় পরিবেশ বান্ধব ইট ভাটার দূর্নাম হচ্ছে। বেশি দামে কয়লা কেনার ফলে ইটের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করে আরও বলেন, ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় ১টন কয়লা আমদানী করে তা দিয়ে ১ হাজার ইট প্রস্তুত করতে ৯ থেকে ১০ হাজার খরচ পড়ছে। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ হাজার ৫ শত টাকা। কয়েকজন ইট ব্যবসায়ী জানান, ইটের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি ঠিকাদার, শিল্পকারখানা ও ব্যক্তি বাড়ী নির্মাণীতাদের অনেকেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উখিয়ার পূর্ব হলদিয়াপালং খেঁওয়াছড়ি মেসার্স অভয় ব্রিকস্ ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসাবে পুড়ানো হচ্ছে সামাজিক বনায়নের গাছ সহ সরকারী সংরক্ষিত বন ভূমির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সরকারি নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে এলাকার ফলজ ও বনজ গাছ সাবাড় করে শত শত মন লাকড়ী পুড়ানোর মহোৎসব চললেও বন বিভাগ, সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন রহস্যজনক ভাবে নিরব রয়েছে।

উপজেলার হলদিয়াপালং, পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী ও রতœাপালং ইউনিয়নের ৬টি ইটের ভাটা রয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে কোন অবস্থাতে ইটের ভাটায় গাছ, কাঠ কিংবা লাকড়ী পুড়ানো যাবে না। অবশ্যই কয়লা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সরকারী নির্দেশকে অমান্য করে ইটের ভাটা গুলোতে অবাধে পুড়ানো হচ্ছে লাকড়ী।

ইটের ভাটা গুলোতে ব্যাপক হারে বনজ ও ফলজ গাছ কর্তন ও পরবর্তীতে লাকড়ী তৈরী করে ইটের ভাটায় জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করায় বর্তমানে প্রাকৃতিক পরিবেশ দুষণ দেখা দিয়েছে। কালো ধোয়ার কারনে গ্রামে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে অভিভাবকগণ জানান।

গত রোববার ২৮ ডিসেম্বর হলদিয়াপালংয়ের পাতাবাড়ী ও খেওয়াছড়ি এলাকায় মিনি ট্রাক ও ডাম্পার ভর্তি করে অবৈধ লাকড়ী ইটের ভাটায় নেওয়ার দৃশ্য সাংবাদিকদের নজরে এসেছে। মেসার্স অভয় ব্রিকস্ প্রোডাক্টস (এবিপি) ইটের ভাটার মালিক হিল্লোল বড়–য়া পলাশের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করার পরও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ প্রসংগে জানতে চাইলে, উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহীম হোসেন বলেন, উখিয়ায় যেসব ইট ভাটায় কাঠ পুড়ানো হবে, সেই সব ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে গাছ ও লাকড়ী উদ্ধার করে মালিকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

পলাশ বড়ুয়া:: উখিয়া কলেজের বার্ষিক শিক্ষা সফর-২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে আজ। নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রায় ...